নিজস্ব প্রতিনিধি: ভেঙ্গে দিল রাঙামাটির কালিন্দীপুর বিজয় স্বরনী সড়কে শেষে ব্যাপ্টিস্ট চার্জ (গীর্জা) । প্রায় মাস খানেক ধরে ভেঙে ফেলা হচ্ছে চার্জটি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে গীর্জাটি সম্পুর্ণ ধংস করতে আরো কযেক দিন লাগবে। দেখা গেছে, ভেঙ্গে ফেলা ধংস স্তুপ থেকে রড ইট নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কয়েকজন।
স্থানীয় সুকুমার দে (৩৮) জানায়, আমি ১ লাখ টাকার চুক্তিতে গির্জাটি ভাঙতেছি। চুক্তিমতে এখানের পুরাতন ইট ও রডসহ অন্যান্য জিনিসগুলো আমার। গীর্জাটি এক তলা ছিল। চার্জের পালক মিখায়েল দিও বলেন, ১৯৮৮ সালে এ চার্জ নির্মাণ হয়। এ গীর্জা কাজের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন তৎকালীন রাঙামাটি পৌরসভার চেয়ারম্যান গৌতম দেওয়ান। ১৯৯২ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাসানের আমলে এটি উদ্বোধন করা হয়।
গীর্জার পালক মিখায়েল বলেন, আশির দশকে দেবপ্রিয় রায় নামে রাঙামাটির একজন সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে কক্সবাজারে ডুলাহাজার খ্রিস্টান মোমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যায়। দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে সে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করে। তিনি ড. অং সং কে রাঙামাটি খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারের কথা জানালে রাঙামাটিতে একটি চার্জ স্থাপনের প্রস্তাব দেন। এ প্রস্তাবের ভিত্তিতে সে রায় বাহাদুর সড়ক এলাকায় মিশনের কাছে ১৭ লাখ টাকার বিনিময়ে তার এক একর জমি বিক্রি করেন। এখানেই চার্জটি নির্মাণ করা হয়।
জানাগেছে,তৎকালিন সময়ে ১৯৯৭ সালে গির্জায় ডাকাতি হলে কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলা এখনো চলমান রয়েছে। মিস মামলা ও জমি রেজিষ্ট্রেশন সংক্রান্ত বিষয়ে মামলা কোর্টে চলমান। এক একর জায়গাটি ক্রয় করা হয়েছিল চাকমা সার্কেল চীফের বংশধর চাদ রায় বায় এর শাশুড় রাজকুমার চাকমা ও অমল চাকমা নামে ।এসব বিষয়ে চাপা পড়ে যাওয়ায় দেবপ্রিয় রায় এ সুযোগে গির্জার ভেঙ্গে বিক্রি করে ফেলছে। যার ক্রয় মূল্য ১কোটি ৩৩লক্ষ টাকা। গির্জার ব্যাপারে কাউকে পাত্তা দিচ্ছে না দেবপ্রিয় রায়।
রাঙামাটি শহরে কালিন্দীপুর বিজয় স্বরনীর ব্যপ্টিস্ট চার্জ। আমাদের নিজস্ব প্রকৌশলী দিয়ে এটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ শেষে আমি এখানে পালক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। গীর্জার পালক মিখাইল আরো বলেন,এখানে প্রায় ২শর অধিক লোক প্রার্থনা করতে আসত। হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, আর্মি, বিজিবি, পুলিশসহ বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তা এখানে প্রার্থনা করতে আসতেন।জমিটি মিশনের নামে রেজিস্ট্রেশন (মিস)মামলা করতে গেলে অসহযোগীতা মাধ্যমে দেবপ্রিয় ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়। একবার রাতে গীর্জায় ডাকাতি হয়। আমি সেদিন গীর্জায় ছিলাম। ১৯৯৭ সালের দিকে আমি জীবনের নিরাপত্তায় গীর্জা থেকে চলে আসি। আমাকে তাড়ানোর জন্য এসব করা হয়েছিল মনে করি। কিন্তু কাগজে কলমে আমি এখনো এ চার্জের পালক। চট্টগ্রামের কোরিয়ান মিশনের অধিনে আমি চলি। বর্তমানে ভাড়া ঘরে আমি ধর্মীয় কার্যক্রম চালাচ্ছি। আমাদের এখন আর প্রার্থনা করার জায়গা নেই। গীর্জায় ক্রস ( যীশু খৃষ্ট প্রতিক) ছিল। এটাও ভাঙা ফেলা হয়েছে।
দেবপ্রিয় রায় বলেন, এখানে কোন কালে গির্জা ছিল না। এরা তো ২০ বছর আগে চলে গেছে। এতে আমি পরিবার নিয়ে থাকতাম। জমিটি এখন আমার দখলে। এটা গির্জা নয় এটা ঘর ছিল এটি আমার। এ বিষয়টি এখনো অবগত নয় রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমাকে এখনো কেউ বলেননি। যদি গীর্জা ভাঙ্গা হয়ে থাকে তাহলে বিষয়টি খুবই দু:খজনক। আমি খোঁজ নিচ্ছি।